Saturday, July 24, 2010

History of Ahsan Manjil

আহসান মঞ্জিল
ঐতিহাসিক স্থাপনা ও জাদুঘর


আহসান মঞ্জিল, ঢাকা

‘সেখানে পৌঁছোতেই দেখি-  চারিদিকে নোকর-চাকর, বন্দুকধারী সেপাই সামন্ত, ঘোড়ার আস্তাবল, ত্রিপলের হুড দেয়া ফোর্ড গাড়ি, আরও কত লোকজন। মস্ত মস্ত খিলান থামওয়ালা ঘর, নানা রকম ফুল-লতা-পাতার নক্সায় ঘেরা। দরজার ওপরে রেশমী পাড় দেয়া খুব সরু চিকের পর্দা। রুহিতনের আকারের, রঙ-বেরঙের কাচ বসানো দরজা আর জানালা। তার ভেতর দিয়ে রামধনুর মোলায়েম আলোয় উদ্‌ভাসিত। সেই রঙে রঞ্জিত মস্ত ঝাড় লণ্ঠনটি নানা বর্ণের তারার মতো ঝিকমিক করে’ - এটি পরিতোষ সেনের আত্মজৈবনিক লেখায় বিশ শতকের গোড়ার দিকে নবাববাড়ি অর্থাৎ আহসান মঞ্জিলের অভ্যন্তরের সুন্দর বর্ণনা। প্রাচীন ঐতিহ্যের ধারক হিসেবে আজও এটি মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে বুড়িগঙ্গার উত্তর তীরে। এখন এটি জাদুঘর। প্রতিদিনই ঐতিহাসিক এ ভবন দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসে মানুষ। হয়তো তৎকালীন নবাববাড়ীর বাসিন্দাদের দেখা এখন মেলে না, তবে জাদুঘর কর্তৃপক্ষের সাজানো-গোছানো প্রতিটি গ্যালারি বা ঘরগুলোতে যেন আজও তাদের পরশ লেগে আছে। আজও অনুভব করা যায় তাদের জীবন-যাপন। গ্যালারিগুলোতে ঘুরতে ঘুরতে চোখের সামনে ভেসে ওঠে নবাববাড়ির ইতিহাস।
পুরনো ঢাকার ইসলামপুর-পাটুয়াটুলি রাস্তার দু’পাশের বর্তমান ভবনগুলোকে পাশ কাটিয়ে যেতে যেতে বুলবুল ললিতকলা একাডেমির সামনে থেকে ডানে মোড় নিলেই যেন হঠাৎ করেই বিচ্ছিন্ন হতে হয় বর্তমান সময় থেকে। চোখের সামনে ভেসে ওঠে অষ্টাদশ শতাব্দীর ঐতিহাসিক ভবন আহসান মঞ্জিল


 ফিরে দেখা ইতিহাস




খাজা আবদুল গণি

অষ্টাদশ শতাব্দীর প্রথমদিকে জালালপুর পরগণার (বর্তমান ফরিদপুর-বরিশাল) জমিদার শেখ এনায়েউল্লাহ আহসান মঞ্জিলের স্থানে রঙমহল নামে একটি প্রমোদ ভবন তৈরি করেন। শেখ এনায়েতউল্লাহর মৃতুর পর তার পুত্র শেখ মতিউল্লাহ রঙমহলটি ফরাসি বণিকদের নিকট বিক্রি করে দেন। ফরাসিরা এখানে তাদের বাণিজ্যকুঠি নির্মাণ করে। নওয়াব আবদুল গনির পিতা খাজা আলীমউল্লাহ ১৮৩০ সালে ফরাসিদের নিকট থেকে কুঠিটি ক্রয় পূর্বক সংস্কারের মাধ্যমে নিজ বাসভবনের উপযোগী করে তোলেন। পরবর্তীতে এর আকৃতি অনেক পরিবর্তন ও পরিবর্ধনের ফলে পুরনো সে ভবনের কোন অস্তিত্ব বর্তমানে নেই। নওয়াব আবদুল গনি ১৮৬৯ সালে প্রাসাদটি পুননির্মাণ করেন এবং প্রিয় পুত্র খাজা আহসানউল্লাহর নামানুসারে এর নামকরণ করেন ‘আহসান মঞ্জিল’। ১৮৮৮ সালের ৭ এপ্রিল প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পুরো আহসান মঞ্জিলের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়। ক্ষতিগ্রস্ত আহসান মঞ্জিল পুননির্মাণের সময় বর্তমান উঁচু গম্বুজটি সংযোজন করা হয়। সে আমলে ঢাকায় আহসান মঞ্জিলের মতো এত জাঁকালো ভবন আর ছিল না। এর প্রাসাদোপরি গম্বুজটি শহরের অন্যতম উঁচু চূড়া হওয়ায় তা বহুদূর থেকে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করতো।

স্থাপত্যিক বৈশিষ্ট্য


আহসান মঞ্চিল, ঢাকা
ইউরোপীয় বৈশিষ্ট্যে নির্মিত একটি স্থাপনা এটি। দ্বিতল আকারে নির্মিত মূল প্রাসাদ ভবন বা রঙমহলটি ১২৫·৪ ী ২৭·৭৫ মিটার আয়তন এবং ১ মিটার উচ্চতা বিশিষ্ট প্লিন্থের উপর স্থাপিত। ভূমি নকশার জন্য নিচ তলায় মেঝে থেকে ছাদ পর্যন্ত উচ্চতা ৫ মিটার এবং দোতলায় ৫·৮ মিটার। প্রাসাদটির উত্তর ও দক্ষিণ উভয়দিকের পোর্চের উপর দিয়ে দোতলার বারান্দা থেকে সম্মুখস্থ বাগানে নেমে গেছে সুবৃহৎ একটি সিঁড়ি। 

আহসান মঞ্জিলের সিঁড়ি ঘর
 সমগ্র আহসান মঞ্জিলটি দুটি অংশে বিভক্ত। পূর্বপার্শ্বের গম্বুজযুক্ত অংশকে বলা হয় প্রাসাদভবন বা রঙমহল এবং পশ্চিমাংশের আবাসিক প্রকোষ্ঠাদি নিয়ে গঠিত ভবনকে বলা হয় অন্দর মহল। প্রাসাদভবনটি আবার দুটি সুষম অংশে বিভক্ত। মাঝখানে গোলাকার কক্ষের উপর অষ্টকোণ বিশিষ্ট উঁচু গম্বুজটি অবস্থিত। এর পূর্বাংশে দোতলায় বৈঠকখানা, গ্রন্থাগার, কার্ডরুম, ও তিনটি মেহমান কড়্গ এবং পশ্চিমাংশে একটি নাচঘর, হিন্দুস্থানী কক্ষ এবং কয়েকটি আবাসিক কক্ষ রয়েছে। নিচতলায় পূর্বাংশে আছে ডাইনিং হল, পশ্চিমাংশে বিলিয়ার্ড কক্ষ, দরবার হল ও কোষাগার। প্রাসাদভবনের উভয় তলায় উত্তর ও দড়্গিণে রয়েছে প্রসারিত বারান্দা। বড় বড় পিলারের সাহায্যে নির্মিত অর্ধবৃত্তকার খিলান সহযোগে বারান্দাগুলো বহির্দিকে উন্মুক্ত। প্রাসাদ ভবনটির গম্বুজটি নির্মাণের জন্য প্রথমে কেন্দ্রীয়ভাবে নির্মিত নিচ তলার বর্গাকার কক্ষটির চার কোণায় ইট দিয়ে ভরাট করে গোলাকার রূপ দেয়া হয়েছে। এর উপর দোতলায় নির্মিত অনুরূপ গোলাকার কক্ষের উর্ধাংশে ৮টি স্কুইঞ্চ নির্মাণ করে ছাদের কাছে কক্ষটিকে অষ্টকোণার রূপ দেয়া হয়েছে। এই অষ্টকোণ রূপটিই ছাদের উপর উঠে গম্বুজের পিপায় পরিণত হয়েছে। পরিশেষে অষ্টবাহুর সঁচালো মাথাগুলোকে কেন্দ্রের দিকে ক্রমশ হেলিয়ে চূঁড়াতে নিয়ে মিলিয়ে কুমুদ কলির আকারে গম্বুজটি তৈরি হয়েছে। ভিতর দিকে গম্বুজটির ব্যাস ২০ ফুট। গম্বুজের শীর্ষে শোভা পাচ্ছে একটি কলস-খাদা ফিনিয়াল।  ভূমি থেকে গম্বুজ শীর্ষের উচ্চতা ২৭ মিটার।



আহসান মঞ্জিলের ড্রইংরৃম
রঙমহলটির পাশেই অবস্থিত অন্দর মহলটি। এটি রঙ মহলের চেয়ে সামান্য কিছু কম উচ্চতা বিশিষ্ট। তবে এর উভয় তলায় দড়্গিণ দিকে নির্মিত প্রশস্ত বারান্দা এবং ছাদের উপর নির্মিত প্যারাপেট একে রঙমহলের পাশে মানানসই রূপ দিয়েছে। রঙমহল এবং অন্দর মহলের মাঝখানে দুটি লোহার বীমের উপর কাঠের তৈরি একটি ঝুলন্ত সংযোগ সেতু নির্মাণ করে এর দ্বারা উভয় ভবনের দোতলাকে সংযুক্ত করা হয়েছে।


আহসান মঞ্জিল যেভাবে জাদুঘর
ঊনবিংশ শতাব্দীতে ঢাকায় নির্মিত ইমারতের মধ্যে আহসান মঞ্জিল সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য। অনবদ্য অলংকরণ সমৃদ্ধ সুরম্য এ ভবনটি ঢাকার অন্যতম শ্রেষ্ঠ স্থাপত্য নিদর্শন। ঐতিহাসিক এ মহানগরীর উন্নয়ন ও রাজনৈতিক ক্রমবিকাশের বহু স্মরণীয় ঘটনাসহ অনেক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক কর্মকাণ্ডের স্মৃতি বিজড়িত প্রাসাদ ভবন আহসান মঞ্জিল। উনবিংশ শতাব্দীর শেষে এবং বিংশ শতাব্দীর প্রথমদিকে উপমহাদেশের, বিশেষ করে বাংলার রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রের অনেক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত আহসান মঞ্জিলেই গৃহীত হয়েছে। ঢাকার নওয়াবদের দানে সর্বপ্রথম ফিল্টার শোধিত পানি সরবরাহ ও বিদ্যুতায়ন ব্যবস্থা চালুর মাধ্যমে আধুনিক ঢাকার গোড়াপত্তন ঘটে। দেশ-বিদেশের বিশিষ্ট অতিথিবৃন্দ এ ভবনে নওয়াবদের আতিথ্য গ্রহণ করতেন। এসব কারণে ইতিহাসে আহসান মঞ্জিল বিশেষ গুরুত্ব লাভ করে।

‘আহসান মঞ্জিলের সংস্কার, সৌন্দর্যবর্ধন ও জাদুঘরে রূপান্তর’ শীর্ষক প্রকল্পের বাস্তবায়ন আরম্ভ হয় ১৯৮৬ সালের মার্চ মাসে। জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ইতিহাস ও স্থাপত্য নিদর্শন সংরক্ষণের জন্য ঐতিহাসিক আহসান মঞ্জিল ভবনটির সংস্কার করে জাদুঘরে রূপান্তর করা এবং প্রাসাদের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ভবনটির পারিপার্শ্বিক এলাকার উন্নয়ন করাই ছিল প্রকল্পটির মূল উদ্দেশ্য। সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীন এ প্রকল্পের নির্বাহী সংস্থা ছিল বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর। তবে প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্ব বাংলাদেশ জাদুঘর ও গণপূর্ত অধিদপ্তরের ওপর যৌথভাবে ন্যস্ত ছিল। সংস্কার ও সংরক্ষণ কাজ গণপূর্ত অধিদপ্তর কর্তৃক সম্পাদিত হয়। নিদর্শন সংগ্রহ ও প্রদর্শনী উপস্থাপনের মাধ্যমে জাদুঘরে রূপান্তরের কাজ সম্পাদন করে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর। ১৯৯২ সালের ২০ সেপ্টেম্বর আহসান মঞ্জিল জাদুঘরের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ও জনসাধারণের পরিদর্শনের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।
রঙমহলের ৩১টি কক্ষের ২৩ টিতে প্রদর্শনী উপস্থাপন করা হয়েছে। ৯টি কক্ষ লন্ডনের ইন্ডিয়া অফিস লাইব্রেরিতে প্রাপ্ত ও মি· ফ্রীৎজা কাপ কর্তৃক ১৯০৪ সালে তোলা আলোকচিত্রের সাথে মিলিয়ে সাজানো হয়েছে। আহসান মঞ্জিলের তোষাখানা ও ক্রোকারিজ কক্ষে থাকা তৈজসপত্র এবং নওয়াব এস্টেটের পুরনো অফিস এডওয়ার্ড হাউস থেকে প্রাপ্ত বিভিন্ন নিদর্শন সংরক্ষণ করে প্রদর্শনীতে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া উক্ত আলোকচিত্রের সাথে মিলিয়ে বিভিন্ন আসবাবপত্র তৈরি এবং সমসাময়িককালের সাদৃশ্যপূর্ণ নিদর্শনাদি ক্রয় ও সংগ্রহ করে গ্যালারিতে উপস্থাপন করা হয়েছে।

গ্যালারি পরিচিতি

গ্যালারি ১


নিচতলার গ্যালারির নকশা
আহসান মঞ্জিলের ইতিহাস, সংস্কার পূর্ব ও সংস্কার পরবর্তী ভবনের আলোকচিত্র নিয়েই গ্যালারি ১। আহসান মঞ্জিল পরিচিতি সুন্দরভাবে উপস্থাপিত হয়েছে এখানে।

গ্যালারি ২
এখানেও আহসান মঞ্জিল পরিচিতি শোভা পেয়েছে। প্রাসাদ ভবনের সঙ্গে সংশিস্নষ্ট উল্লেখযোগ্য ঐতিহাসিক তথ্যাবলী, আদি স্থাপত্যিক বৈশিষ্ট্য এবং বিবর্তিত রূপের চিত্রে সেজেছে এই গ্যালারিটি।

গ্যালারি ৩
এটি প্রাসাদ ডাইনিং রুম। ১৯০৪ সালে তোলা আলোকচিত্রের দৃশ্যানুযায়ী সজ্জিত এ গ্যালারি। এখানে প্রদর্শিত আলমারি, আয়না, কাচ ও চীনামাটির তৈজসপত্র নওয়াবদের ব্যবহৃত মূল নিদর্শন।

গ্যালারি ৪
প্রাসাদ শীর্ষে দৃশ্যমান গম্বুজটি এ গোলাকার কড়্গের উপরই নির্মিত। এখানে প্রদর্শিত ঢাল, তলোয়ার, আর্মড ফিগার ইত্যাদি নওয়াবদের ব্যবহৃত মূল নিদর্শন।

গ্যালারি ৫
এটি প্রধান সিঁড়িঘর। এখানে দেখা যাবে বিশেষ বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত কাঠের সিঁড়ি যা মূলানুরূপ নিদর্শন দিয়ে সজ্জিত।

গ্যালারি ৬
এ গ্যালারিটি আহসানউল্লাহ হাসপাতালের সরঞ্জামাদিতে সজ্জিত। নওয়াবজাদি আখতার বানু কর্তৃক ১৯৩০ সালে টিকাটুলিতে তার পিতার নামে স্থাপিত স্যার আহসানউল্লাহ জুবিলি মেমোরিয়াল হাসপাতালে ব্যবহৃত কিছু চিকিৎসা সরঞ্জাম প্রদর্শিত হয়েছে এখানে।

গ্যালারি ৭
এই কক্ষটি ছিল মূলত নওয়াবদের দরবার হল। নিখিল ভারত মুসলিম লীগের গঠন বিষয়ক ঘটনাবলীর তথ্য ও চিত্র প্রদর্শিত হয়েছে এখানে।

গ্যালারি ৮
এটি বিলিয়ার্ড কক্ষ। ১৯০৪ সালে তোলা আলোকচিত্রের সাথে সঙ্গতি রেখে বিলিয়ার্ড টেবিল ও দেয়ালে বিভিন্ন জীবজন্তুর শিং প্রদর্শিত হয়েছে এ গ্যালারিতে।

গ্যালারি ৯
এটি সিন্দুক কক্ষ। নওয়াবদের কোষাগার নামে পরিচিত এ কক্ষটিতে লোহার সিন্দুক ও আলমারি প্রদর্শিত হয়েছে।


গ্যালারি ১০
নওয়াব পরিবারের তিনজন স্বনামধন্য ব্যক্তিত্ব- নওয়াব স্যার আবদুল গনি, নওয়াব স্যার আহসানউল্লাহ ও নওয়াব স্যার সলিমুল্লাহকে কেন্দ্র করে এ গ্যালারিটি সজ্জিত। নওয়াবদের প্রতিকৃতি ও সংক্ষিপ্ত জীবনীসহ তাদের বংশ তালিকা উপস্থাপিত হয়েছে এখানে।


গ্যালারি ১১
নওয়াবদের সমসাময়িককালের দেশবরেণ্য রাজনীতিবিদ, সমাজ সংস্কারক, ভূস্বামী, বুদ্ধিজীবী, কবি-সাহিত্যিক প্রভৃতি ব্যক্তিবর্গের প্রতিকৃতি এখানে রাখা হয়েছে।


গ্যালারি ১২
এই গ্যালারিটি নওয়াব স্যার সলিমুল্লাহর সম্মানার্থে। স্যার সলিমুল্লাহর স্মরণে গ্যালারি তার স্মৃতি বিজড়িত নিদর্শন দিয়ে সজ্জিত।

গ্যালারি ১৩
গ্যালারি ১১-এর অনুরূপ এই গ্যালারিটি। নওয়াবদের সমসাময়িককালের বিশিষ্ট মনীষীদের প্রতিকৃতি দিয়ে সজ্জিত। এছাড়া, আহসান মঞ্জিলে প্রাপ্ত নওয়াব পরিবারের ব্যবহৃত হাতির দাঁতের মূল নিদর্শন প্রদর্শিত হয়েছে।


গ্যালারি ১৪
এই গ্যালারিটি হিন্দুস্থানী কক্ষ ১৯০৪ সালে তোলা আলোকচিত্রে কক্ষটিকে ‘হিন্দুস্থানী রুম’ বলা হয়েছে। উক্ত আলোকচিত্রের সাথে মিলিয়ে কক্ষটি সজ্জিত করা হয়েছে।

গ্যালারি ১৫
দোতলার প্রধান সিঁড়িঘর এটি। প্রাসাদের নিত তলা থেকে উপর তলায় ওঠানামার জন্য বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত কাঠের সিঁড়ির উপরাংশের দৃশ্য। ১৯০৪ সালের আলোকচিত্রের সাথে মিলিয়ে মূলানুরূপে এ গ্যালারিটি সাজানো হয়েছে।

গ্যালারি ১৬
এটি নবাবদের ব্যবহৃত ব্যক্তিগত লাইব্রেরি ঘর। ১৯০৪ সালে তোলা আলোকচিত্র অনুযায়ী কক্ষটি সাজানো হয়েছে। আইন ও বিচার, উপন্যাস, ক্রীড়া ইত্যাদি বিষয়ক দুষ্প্রাপ্য গ্রন্থ এবং নওয়াবদের সমসাময়িককালে প্রকাশিত পত্র-পত্রিকা এখানে সংরক্ষিত আছে।

গ্যালারি ১৭
এখানে কার্ড রুম। এটিও ১৯০৪ সালের আলোকচিত্রের সাথে মিলিয়ে সজ্জিত। প্রদর্শিত অধিকাংশ তৈজসপত্র নওয়াবদের সময়ের মূল নিদর্শন।


গ্যালারি ১৮
১৯০৪ সালের আলোকচিত্রের সাথে মিলিয়ে সজ্জিত স্টেট বেডরম্নম এখানে। আহসান মঞ্জিলে আগত উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা ও বিশিষ্ট অতিথিদের বিশ্রামের জন্য কক্ষটি ব্যবহৃত হতো। প্রদর্শিত তৈজসপত্র ও অন্যান্য অধিকাংশ নিদর্শন নওয়াবদের ব্যবহৃত।


গ্যালারি ১৯
নওয়াব আবদুল গনি কর্তৃক ঢাকায় প্রথম পানি সরবরাহ বিষয়ক নিদর্শন ও তথ্যাদি দিয়ে কক্ষটি সাজানো হয়েছে।


গ্যালারি ২০

নওয়াব আহসানউল্লহ কর্তৃক ঢাকায় প্রথম বিদ্যুৎ ব্যবস্থার প্রবর্তন বিষয়ক নিদর্শন ও তথ্যাদি দিয়ে সাজানো হয়েছে।
 


গ্যালারি ২১
এখানে প্রাসাদ ড্রয়িং রুম। বিশিষ্ট অতিথিবৃন্দকে এখানে সম্ভাষণ জানানো হতো। তাছাড়া, উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা বা নেতৃবৃন্দের সঙ্গে পরামর্শের জন্যও এ কক্ষটি ব্যবহৃত হতো। প্রদর্শিত অধিকাংশ নিদর্শন নওয়াবদের আমলের।


গ্যালারি ২২
এটি দোতলার গোলঘর। প্রাসাদ শীর্ষে দৃশ্যমান উঁচু গম্বুজটি এ কক্ষের উপর নির্মিত। এখানে প্রদর্শিত অস্ত্রশস্ত্র আহসান মঞ্জিলেই প্রাপ্ত।


গ্যালারি ২৩
এটি বলরুম বা নাচঘর। এ কড়্গে একত্রে পাশাপাশি প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য নাচ-গানের একটি কাল্পনিক দৃশ্য বৃহদাকার তৈলচিত্রের মাধ্যমে দেখানো হয়েছে। প্রদর্শিত রূপার অলংকৃত চেয়ার ও ক্রিস্টাল চেয়ার-টেবিল নওয়াবদের ব্যবহৃত নিদর্শন।

সেবাসমূহ
বর্তমানে এখানে ৫২ জন কর্মকর্তা-কর্মচারি নিযুক্ত রয়েছেন। আরও ৭ টি পদ খালি থাকলেও তা পূরণ করার চিন্তাভাবনা করছেন কর্তৃপক্ষ। গাইড সেবার সুব্যবস্থা রয়েছে এখানে। রয়েছেন একজন অভিজ্ঞ গাইড। যিনি দেশি-বিদেশি পর্যটকদের গাইড সেবা দিয়ে থাকেন। এছাড়া সাধারণের জন্য বিভিন্ন তথ্যাদি জানারও সুযোগ রয়েছে। প্রকাশনা হিসেবে আহসান মঞ্জিলের নির্দেশিকা ও বিভিন্ন ধরণের ছবি রয়েছে- যা দর্শনার্থীরা সুলভ মূল্যে সংগ্রহ করতে পারেন। ভিআইপিদের জন্য ভেতরে এবং সাধারণ দর্শনার্থীদের জন্য বাইরে গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা রয়েছে। রয়েছে পুরুষ ও মহিলাদের জন্য পৃথক টয়লেট। রয়েছে নিরাপত্তার সু ব্যবস্থা। ইচ্ছা হলে ছবি তোলা বা রেকর্ডিংও করতে পারেন দর্শনার্থীরা; তবে অবশ্যই তা জাদুঘরের বাইরে। প্রশস্ত ফুলের বাগান, ঘাস বিছানো মাঠে আড্ডা, সিঁড়ির নিচে একটি খাবারের ক্যান্টিন- সব মিলিয়ে এখানকার সেবাসমূহ নিয়ে দারুণ সময় কাটাতে পারেন দর্শনার্থীরা।

দর্শনার্থী ফি
মূল ফটকের বা দিকেই রয়েছে টিকিট কাউন্টার। বর্তমানে দর্শনার্থী ফি বা টিকিটের মূল্য নির্ধারিত রয়েছে মাত্র দুই টাকা। তবে কর্তৃপক্ষ এটি বৃদ্ধির চিন্তাভাবনা করছেন বলে জানা যায়। প্রতিদিন গড়ে এখানে ১৫০০-২০০০ দর্শনার্থী প্রবেশ করে থাকে।

সময়সূচি
গ্রীষ্মকালীন সময়ে (এপ্রিল-সেপ্টেম্বর) শনিবার থেকে বুধবার প্রতিদিন সকাল ১০·৩০ মিনিট থেকে বিকাল ৫·৩০ মিনিট পর্যন্ত এবং শীতকালীন সময়ে (অক্টোবর-মার্চ) সকাল ৯·৩০ মিনিট থেকে বিকাল ৪·৩০ মিনিট পর্যন্ত আহসান মঞ্জিল খোলা থাকে। এছাড়া শুক্রবার বিকাল ৩·৩০ মিনিট থেকে ৭·৩০ মিনিট পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য খোলা থাকে আহসান মঞ্জিল। সাপ্তাহিক বন্ধ বৃহস্পতিবার এবং অন্যান্য সরকারি ছুটির দিনও এটি বন্ধ থাকে।

No comments:

Post a Comment