Tuesday, July 27, 2010

Dhaka Kendra in Old Dhaka



Dhaka Kendra



ঢাকা কেন্দ্র
ঢাকার ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি চর্চা প্রতিষ্ঠান
প্রায় ১৫ বছর ধরে ঢাকায় বসবাস। ঘুরে বেড়িয়েছি ঢাকার আনাচে-কানাচে, অলিতে-গলিতে। এরকম ঘুরতে ঘুরতেই পরিচয় হয় মোহাম্মদ আজিম বখ্‌শ-এর সাথে। তিনি পুরান ঢাকার মানুষ। ‘ঢাকা কেন্দ্র’ এর চেয়ারম্যান। নিভৃতে-নিরবে তিলে তিলে ঢাকার ইতিহাস-ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে কাজ করে আসছেন বছরের পর বছর। আমাদের এ আয়োজন তার গড়া ‘ঢাকা কেন্দ্র’ নিয়ে। যারা ঢাকা নিয়ে আগ্রহী, ঢাকাকে ভালোবাসেন অথবা ঢাকাকে, ঢাকার ইতিহাস, ঐতিহ্যকে জানতে চান-  তাদের জন্য সমৃদ্ধ এক প্রতিষ্ঠান ঢাকা কেন্দ্র। পুরান ঢাকায় অবস্থিত ঢাকা কেন্দ্র নিয়ে আমার এ আয়োজন ঢাকাপ্রেমী, ঢাকাবাসী এবং ঢাকামুখী সকলের জন্য-

ফরাশগঞ্জের ২৪ মোহিনী মোহন দাস লেনে অবস্থিত ঢাকা কেন্দ্রে যেতে হলে পুরান ঢাকার অলি-গলি পেরিয়ে যেতে যেতে চোখে পড়বে পুরান ঢাকার শত বছরের পুরনো ঐতিহাসিক অনেক ভবন। এর কোনোটি জরাজীর্ণ আবার কোনোটি অযত্ন আর অবহেলায় কালের গর্ভে হারিয়ে যাবার পথে। এসব বাড়িতেই এক সময় বসবাস করতেন ঢাকার বিখ্যাত বনেদি পরিবারের লোকজন। আভিজাত্যে ভরা ছিল এসব বাড়ির আঙিনা। ভঙ্গুর এ ভবনগুলোর ভাঙ্গা ইটগুলোর ফাঁক গলে এখনও যেন বেরিয়ে আসতে চায় সে সময়কার ঐতিহ্য আর সংস্কৃতির সমৃদ্ধ ইতিহাস। বাড়িগুলোর পাশ দিয়ে হেঁটে যাবার সময় আপনার কাল্পনিক মনে ভেসে উঠতে পারে সেসব চিত্র। পিপাসু দৃষ্টি নিয়ে আপনি হয়তো জানতে চাইবেন সে আমলের ঢাকার সমৃদ্ধ ইতিহাস, সংস্কৃতি আর সামাজিক বিবরণের কথা। আপনার এ তৃষ্ণা মেটানোর সুযোগ নিতে আপনিও চলে আসতে পারেন ঢাকা কেন্দ্রে।
সূত্রাপুর-ফরাশগঞ্জ-কাগজীটোলা মহলস্নার সরদার ছিলেন মাওলা বখ্‌শ সরদার। ঢাকার পঞ্চায়েত প্রথার শেষ উত্তরাধিকারী ছিলেন তিনি।
মৃত্যুবরণ করেন ১৯৮৭ সালে। তার স্মৃতিকে ধরে রাখতে ১৯৮৮ সালের ১৫ জানুয়ারি তার সন্তানেরা প্রতিষ্ঠা করেন মাওলা বখ্‌শ সরদার মেমোরিয়াল ট্রাস্ট। সম্পূর্ণ পারিবারিক অর্থে পরিচালিত এই ট্রাস্টেরই একটি শাখা হলো ঢাকা কেন্দ্র। এটি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৯৭ সালে। ঢাকার নাগরিকদের সচেতন করা, ঢাকার ইতিহাস-ঐতিহ্য নির্ভর প্রদর্শনী ও প্রকাশনা, ঢাকা বিষয়ক গবেষণা ও চর্চা, ঢাকার লুপ্ত ঐতিহ্য পুনরম্নদ্ধার ও সংরক্ষণ, ঢাকা বিষয়ক গ্রন্থ ও দলিলপত্র সংগ্রহ ও সংরক্ষণসহ ঢাকাকে সাধারণ্যে জনপ্রিয় করে তোলাই ঢাকা কেন্দ্রের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। চলুন পাঠক, ঘুরে আসি ঢাকা কেন্দ্র থেকে। 

 প্রধান ফটক থেকে অন্দর বাড়িতে ঢুকলেই পুরনো বাড়ির বৈশিষ্ট্য কোর্ট ইয়ার্ড পার হয়ে লোহার সিঁড়ি বেয়ে দোতলায়। দোতলায় উঠলেই আপনার চোখ জুড়িয়ে যাবে বিভিন্ন ফুলের গাছ আর ক্যাকটাসে সাজানো বাগান দেখে। পাখির কিচিরমিচির ডাকাডাকি আর সুনশান নিরবতার ভেতর দিয়েই ঢাকা কেন্দ্রের প্রবেশ পথ।
 ঢাকা কেন্দ্র পাঠাগার


ঢাকা কেন্দ্র পাঠাগারটি এ প্রতিষ্ঠানের প্রাণকেন্দ্র। পাঠাগারটির দুটি অংশ। একটি সাধারণ পাঠাগার অন্যটি রেফারেন্স পাঠাগার। পাঠাগারটিতে রয়েছে চলিস্নশ জন পাঠকের জন্য সুপরিসর পাঠকক্ষ। জ্ঞানগর্ভ ও গবেষণালব্ধ বইয়ের পাশাপাশি এখানে রয়েছে শিশুমনের পূর্ণতা বিকাশের উপযোগী শিশুসাহিত্যের নানাবিধ বই। পাঁচমিশালি সাধারণ বইয়ের সংখ্যা কয়েক হাজার। তবে ঢাকা কেন্দ্রের এ পাঠাগারে ঢাকা বিষয়ক বইয়ের প্রাধান্য রয়েছে বেশ। প্রায় ৪০০ বই রয়েছে ঢাকা বিষয়ক। আর এসব বইয়ের মধ্যে রয়েছে এমন সব বই যা বেশ দুর্লভ ও দুষ্প্রাপ্য। কিছু কিছু বই রয়েছে যেগুলো এখানে ছাড়া অন্য কোথাও পাওয়া দুষ্কর। গবেষণাধর্মী বইয়ের রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহৃত হয় এখানকার রেফারেন্স পাঠাগার। যারা ঢাকা বা ঢাকা বিষয়ক গবেষণা কাজে লিপ্ত তাদের জন্য নিঃসন্দেহে এটি একটি নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠান। সাধারণ পাঠকদের জন্য পাঠাগারটি শনি থেকে বুধবার বিকাল ৪টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকে। আর গবেষকরা তাদের গবেষণা কাজে সকাল ১০টা থেকে দুপুর ৩টা পর্যন্ত ব্যবহার করতে পারেন পাঠাগারটি। বৃহস্পতিবার সাপ্তাহিক বন্ধ। শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে ১২টা ৩০ মিনিট পর্যন্তô খোলা থাকে পাঠাগারটি।

 

প্রদর্শনী কক্ষ

ঢাকা কেন্দ্রের প্রদর্শনী কক্ষ
 
ঢাকা কেন্দ্রের প্রদর্শনী কক্ষ



পুরনো যাদেরকে টানে-  তাদের নিশ্চয়ই ভালো লাগবে ঢাকা কেন্দ্রের প্রদর্শনী কক্ষটি। পুরনো বেশকিছু সামগ্রী শোভা পাচ্ছে কক্ষটিতে। এসব সামগ্রীর মধ্যে ১৮৮৯ সালের সিন্দুক, ঢাকার টেলিভিশন সেন্টার শুরু হওয়ার পর দ্বিতীয় মডেলের ২০ ইঞ্চি টেলিভিশন, উনবিংশ শতাব্দীর চেয়ার, রেডিও আর ঢাকার চারটি আদি পরিবারের ব্যবহৃত পিতল-রূপা-কাঁচের পুরনো নানা সামগ্রী আপনাকে হয়তো পুরনোর প্রতি আরো আকর্ষণ বাড়িয়ে তুলবে। এছাড়াও ঢাকার ঐতিহাসিক ও দুষ্প্রাপ্য ছবি সাজানো আছে প্রদর্শণী কক্ষর দেয়ালে দেয়ালে। আরো রয়েছে ঢাকা বিষয়ক দুর্লভ অনেক বই।


 

ঢাকার আড্ডা


ঢাকা কেন্দ্রের নানা কার্যক্রমের মধ্যে অন্যতম আয়োজন ঢাকার আড্ডা। দ্বিমাসিক এ আয়োজন। ঢাকা কেন্দ্রের বিষয়ভিত্তিক এ আড্ডায় মুখরিত হয় ঢাকা বিষয়ক নানান কথা, স্মৃতিচারণ, ইতিহাস, ঐতিহ্য আর সংস্কৃতির নানান দিন। গবেষক, সাংবাদিক, লেখক, কবি আর ঢাকার স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ঢাকার এসব আড্ডায় উপস্থিত থাকেন ঢাকাপ্রেমী অনেকেই। ইচ্ছে করলে আপনিও অংশ নিতে পারেন আড্ডায়। বিগত আড্ডাগুলোতে কখনো উঠে এসেছে ঢাকার চলচ্চিত্র, কখনো ঢাকার পঞ্চায়েত আবার কোন কোন আড্ডার বিষয়বস্তু ছিল ঢাকার ইফতার।




ত্রৈমাসিক ঢাকা
 
‘ত্রৈমাসিক ঢাকা’ ঢাকাপ্রেমীদের পত্রিকা। এটি ঢাকা কেন্দ্রের মুখপত্র। ঢাকার ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি সাধারণ্যে তুলে ধরার জন্য ত্রৈমাসিক ঢাকা বিভিন্ন প্রতিবেদন প্রকাশ করে থাকে। এসব প্রতিবেদনে উঠে আসে আদি ঢাকার সংস্কৃতি আর প্রীতিপূর্ণ ও গৌরবময় অতীতের নানান সব চিত্র। হারানো দিনের ঢাকার দুর্লভ আর দুষ্প্রাপ্য সব আলোকচিত্রের পাশাপাশি ঢাকার ঐতিহাসিক সব তথ্যে ভরপুর এ পত্রিকাটি ঢাকাপ্রেমী যে কারো মনের খোরাক মেটাতে পারে।
ঢাকা কেন্দ্রের অন্যান্য কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে প্রামাণ্যচিত্র ও স্লাইড প্রদর্শন, সুন্দর করে কথা বলার উপর ওয়ার্কশপ, সাপ্তাহিক ও ভ্রমণ বিষয়ক আড্ডা এবং বিষয় ভিত্তিক নানা আলোচনা সভা। ঢাকা কেন্দ্রের উদ্দেশ্য ঢাকা চর্চা হলেও এটি আঞ্চলিক সংকীর্ণতায় বিশ্বাসী নয়। প্রকৃতপক্ষে স্থানীয়ভাবে আঞ্চলিক ইতিহাস চর্চাই জাতীয় ইতিহাস রচনায় সহায়তা করে। সেদিক থেকে ঢাকা কেন্দ্রের প্রচেষ্টা জাতীয় ইতিহাস ও ঐতিহ্য পুনরুদ্ধার, পুনর্গঠন ও সংরক্ষণ প্রয়াসের সাথে অবিচ্ছেদ্য। সংকীর্ণ সাম্প্রদায়িক মনোবৃত্তির পরিপন্থী এই প্রতিষ্ঠান উন্নত মানসিকতা সম্পন্ন যে কোন ব্যক্তিকে স্বাগত জানায়। এ প্রতিষ্ঠান যেমন জ্ঞানী-গুণী ও বিদগ্ধ পণ্ডিতদের সমাবেশ কামনা করে তেমনি কামনা করে সাধারণ মানুষ ও পাঠককূলের নিয়মিত আগমন। পাখিডাকা ছায়াশীতল এমন পরিবেশে ঢাকার ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্ড়্গৃতি চর্চা আর ঢাকা কেন্দ্রের নানা কার্যক্রমে অংশ নিতে পারেন আপনিও। দোতলায় সুসজ্জিত ফুলের বাগান, বাগানে মুক্তিযুদ্ধের বিজয় ভাস্কর্য, ক্যাকটাস নার্সারি আর ছায়াশীতল ছাউনির নিচে আড্ডা দিতে দিতে আপনিও হতে পারেন ঢাকা কেন্দ্রের একজন।

No comments:

Post a Comment