ভূমিকম্পের মাত্রা মাপি রিখটার স্কেলে
বিভিন্ন সময় বিভিন্ন মাত্রার ভূমিকম্প হতে পারে। মাত্রাভেদে ভূকম্পনের শক্তি এবং ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনাও ভিন্ন। ভূকম্পনের এই মাত্রা নির্ধারণে রিখটার স্কেল ব্যবহার করা হয়। চার্লস রিখটারের রিখটার স্কেল উদ্ভাবনের পর থেকে বিজ্ঞান এখন অনেকটাই এগিয়ে গেছে। ভূকম্পনের স্থান, কাল ও কম্পনের শক্তি নির্ধারণ করা এখন মানুষের হাতের মুঠোয়। চলুন জেনে নিই রিখটার স্কেল সম্পর্কিত কিছু তথ্য-
চার্লস রিখটারের ‘রিখটার ম্যাগনেচিউড স্কেল’
বিজ্ঞানী চার্লস রিখটারের নামানুসারে এর নাম রাখা হয় রিখটার ম্যাগনেচিউড স্কেল। এর মাধ্যমেই ভূমিকম্পের ফলে যে শক্তি অবমুক্ত হয় তা পরিমাপ করা হয়। একে লোকাল ম্যাগনেচিউড স্কেলও বলা হয়। এটি বেস-১০ লগারিদম স্কেল। ১৯৩৫ সালে চার্লস এই স্কেলের উদ্ভাবন করেন। সহযোগী হিসেবে তার সঙ্গে ছিলেন বেনো গুটেনবার্গ। দুজনেই ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউড অব টেকনোলজির বিজ্ঞানী। রিখটার স্কেলের ওপর ভিত্তি করে ১৯৭৯ সালে উদ্ভাবন করা হয় মোমেন্টস ম্যাগনেচিউড স্কেল। চার্লস রিখটার মৃত্যুবরণ করেন ১৯৮৫ সালে।
বিভিন্ন মাত্রার ভূমিকম্প
মাত্রাঃ ২·০
সাধারণত যন্ত্রের সাহায্য ছাড়া এই মাত্রার ভূমিকম্পের অনুভব করা যায় না। প্রতিদিন রিখটার ম্যাগনেচিউড স্কেলে ২·০ মাত্রার নিচে ভূমিকম্প হচ্ছে কমপক্ষে আট হাজার- এটা হচ্ছে মাইক্রো আর্থকোয়েক।
মাত্রাঃ ২·০- ২·৯
২·০ থেকে ২·৯ মাত্রার ভূমিকম্প রিখটার স্ড়্গেলে প্রতিদিন প্রায় এক হাজার ভূমিকম্প হচ্ছে। এটাও অনুভব করা যায় না। যন্ত্রের সাহায্যে রেকর্ড করা যায়।
মাত্রাঃ ৩·০-৩·৯
এই মাত্রার ভূমিকম্প আগের দুটির মতো নয়। রিখটার স্কেলে ৩·০-৩·৯ মাত্রার ভূমিকম্প কিছুটা অনুভব করা যায়। এই মাত্রার ভূমিকম্প হলে এতে কদাচিৎ ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে। বছরে এই মাপের ভূমিকম্প হয়ে থাকে প্রায় ৪৯ হাজার।
মাত্রাঃ ৪·০-৪·৯
এই মাত্রার ভূমিকম্প হয়ে থাকে বছরে প্রায় ৬ হাজার। রিখটার স্কেলে ৪·০-৪·৯ মাত্রার ভূমিকম্প হলে সাধারণত এতে তেমন বিশেষ কোন ক্ষয়ক্ষতি হয় না। তবে এই মাত্রায় কম্পনটি বেশ অনুভব করা যায়। ঘরের জিনিসপত্র কাঁপতে থাকে ঝনঝনিয়ে।
মাত্রাঃ ৫·০-৫·৯
রিখটার স্কেলে ৫·০-৫·৯ মাত্রার ভূমিকম্পে কিছু ড়্গয়ড়্গতির সম্ভাবনা থাকে। এই মাত্রার ভূমিকম্প বছরে গড়ে প্রায় ৮০০টি হয়ে থাকে। আর এতে দুর্বল কাঠামোর ওপর নির্মিত ঘরবাড়ী ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
মাত্রাঃ ৬·০-৬·৯
এক্ষেত্রে ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে। বছরে প্রায় ১২০টি ভূমিকম্প হয়ে থাকে এই মাত্রায়। রিখটার স্ড়্গেলে ৬·০-৬·৯ মাত্রায় ভূমিকম্প হলে জনবহুল এক শ ষাট কিলোমিটার এলাকা পর্যন্তô ধ্বংসযজ্ঞ ঘটতে পারে।
মাত্রাঃ ৭·০-৭·৯
ব্যাপক ড়্গয়ড়্গতির সম্্ভাবনা রয়েছে এই মাত্রায়। রিখটার স্ড়্গেলে ৭·০-৭·৯ মাত্রার ভূমিকম্প বছরে গড়ে প্রায় ১৮টি হয়ে থাকে। বিশাল এলাকাজুড়ে এতে ড়্গয়ড়্গতি ও ধ্বংসযজ্ঞের সম্্ভাবনা রয়েছে।
মাত্রাঃ ৮·০-৮·৯
ভয়াবহ ড়্গয়ড়্গতির সম্মুখীন হতে হয় এই মাত্রার ভূমিকম্পে। রিখটার স্ড়্গেলে ৮·০-৮·৯ মাত্রার ভূমিকম্প ঘটতে পারে বছরে একটি। তবে ড়্গয়ড়্গতির পরিমাণ ব্যাপক হয়ে থাকে। কেননা, এই মাত্রার ভূমিকম্পে শত শত মাইল এলাকাজুড়ে ধ্বংসযজ্ঞের সম্মুখীন হতে হয়।
মাত্রাঃ ৯·০-৯·৯
রিখটার স্ড়্গেলে যখন ভূমিকম্পের মাত্রা ৯·০-৯·৯ হয়ে থাকে তখন এর ভয়বহতা ব্যাপক। সাধারণত এই মাত্রার ভূমিকম্প ২০ বছরে একবার হতে পারে। আর ধ্বংসযজ্ঞের এরিয়া ছড়িয়ে যায় অনেকখানি। হাজার হাজার মাইলজুড়ে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ ঘটতে পারে।
মাত্রাঃ ১০·০ বা তার অধিক
এখনও এই মাত্রার ভূমিকম্প রেকর্ড হয়নি।
তবে এ ধরণের ঘটনা ঘটতেও পারে। ভূমিকম্পের মাত্রা যদি ১০·০ বা তার উপরে থাকবে তখন এর ধ্বংসযজ্ঞ ধারণা করাও কঠিন। ভয়াবহ কোনও রূপ নিতে পারে তা।
মাত্রাভেদে ভূমিকম্প
মাইনর ভূমিকম্পঃ ২·০-৩·৯ মাত্রা
লাইট ভূমিকম্পঃ ৪·০-৪·৯ মাত্রা
মডারেট ভূমিকম্পঃ ৫·০-৫·৯ মাত্রা
স্ট্রং ভূমিকম্পঃ ৬·০-৬·৯ মাত্রা
মেজর ভূমিকম্পঃ ৭·০-৭·৯ মাত্রা গ্রেট ভূমিকম্পঃ ৮·০-৯·৯ মাত্রা
এপিক ভূমিকম্পঃ ১০·০ বা তার অধিক
বিভিন্ন মাত্রায় ভূমিকম্পে সৃষ্ট শক্তি
* রিখটার পরিমাপ ০·৫ হলে ভূকম্পনে সৃষ্ট শক্তি হয় ৫·৬ কিলোগ্রাম - যা বড় হ্যানড গ্রেনেড সমতুল্য।
* রিখটার পরিমাপ ১·০ হলে ভূকম্পনে সৃষ্ট শক্তি হয় ৩২·০ কিলোগ্রাম- যা নির্মাণস্থলে বিস্ফোরণ সমতুল্য।
* রিখটার পরিমাপ ১·৫ হলে ভূকম্পনে সৃষ্ট শক্তি হয় ১৭৮·০ কিলোগ্রাম - যা বোমা বিস্ফোরণ সমতুল্য।
* রিখটার পরিমাপ ২·৫ হলে ভূকম্পনে সৃষ্ট শক্তি হয় ৫·৬ মেট্রিক টন - যা শক্তিশালী বোমা বিস্ফোরণ সমতুল্য।
* রিখটার পরিমাপ ৩·৫ হলে ভূকম্পনে সৃষ্ট শক্তি হয় ১৭৮·০ মেট্রিক টন - চেরনোবিল বিস্ফোরণ, ১৯৮৬।
* রিখটার পরিমাপ ৪·০ হলে ভূকম্পনে সৃষ্ট শক্তি হয় ১·০ কিলোটন - ছোট পারমাণবিক বোমা বিস্ফোরণ সমতুল্য।
* রিখটার পরিমাপ ৫·০ হলে ভূকম্পনে সৃষ্ট শক্তি হয় ৩২·০ কিলোটন - নাগাসাকি পারমাণবিক বোমা, ১৯৪৫। * রিখটার পরিমাপ ৬·০ হলে ভূকম্পনে সৃষ্ট শক্তি হয় ১·০ মেগাটন - ডাবল স্প্রিংফ্লাট ভূমিকম্প, ১৯৯৪।
* রিখটার পরিমাপ ৭·০ হলে ভূকম্পনে সৃষ্ট শক্তি হয় ৩২·০ মেগাটন - জাভা ভূমিকম্প, ২০০৯।
* রিখটার পরিমাপ ৭·৫ হলে ভূকম্পনে সৃষ্ট শক্তি হয় ১৭৮·০ মেগাটন - কাশ্মির ভূমিকম্প, ২০০৫।
* রিখটার পরিমাপ ৮·০ হলে ভূকম্পনে সৃষ্ট শক্তি হয় ১·০ গিগাটন - সানফ্রান্সিসকো ভূমিকম্প, ১৯০৬।
* রিখটার পরিমাপ ৮·৫ হলে ভূকম্পনে সৃষ্ট শক্তি হয় ৫·৬ গিগাটন - সুমাত্রা ভূমিকম্প, ২০০৭।
* রিখটার পরিমাপ ৯·০ হলে ভূকম্পনে সৃষ্ট শক্তি হয় ৩২·০ গিগাটন - লিসবোয়া ভূমিকম্প, ১৭৫৫।
* রিখটার পরিমাপ ৯·৩ হলে ভূকম্পনে সৃষ্ট শক্তি হয় ১১৪·০ গিগাটন - ভারত মহাসাগর ভূমিকম্প, ২০০৪।
* রিখটার পরিমাপ ৯·৫ হলে ভূকম্পনে সৃষ্ট শক্তি হয় ১৭৮·০ গিগাটন - চিলি ভূমিকম্প, ১৯৬০।
* রিখটার পরিমাপ ১০·০ হলে ভূকম্পনে সৃষ্ট শক্তি হয় ১·০ টেরাটন - যা এখনও কোথাও ঘটেনি।
ভূকম্পন মাপতে রিখটার স্ড়্গেল-উদ্ভাবক বিজ্ঞানী চার্লস রিখটার তার জীবদ্দশায় সারা পৃথিবীজুড়ে ভূমিকম্প সম্পর্কে মানুষকে অবহিত করেছেন। ভূমিকম্পে ড়্গয়ড়্গতি এবং ধ্বংসযজ্ঞ এড়াতে নানা রকম প্রস্তুতি নিতে উৎসাহ যুগিয়েছেন। আমাদের দেশেও মাত্র কিছুদিন পূর্বে ঘটে গেল ছোট মাপের ভূকম্পন। আর ছোট মাত্রার ভূমিকম্প নাকি বড় ধরনের ভূমিকম্পেরই আশঙ্কা। তবে ছোট হোক বড় হোক আগাম প্রস্তুতি থাকা দরকার সবার।
No comments:
Post a Comment